পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পিতা শেখ মুজিবনকে বাংলাদেশে কেউ দেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে তাদের প্রতিহত করা হবে বলে হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেছেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ সংগঠকরা। মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) বিকেলে নগরীর জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট উপদেষ্টাদের অপসারণের’ দাবিতে এক সমাবেশ ও মানবন্ধন কর্মসূচি থেকে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
বিজ্ঞাপন

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ, চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক জুবায়ের আহমেদ মানিক, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজে এজিএম বাপ্পী, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের আহমেদ সাইফ, মির্জা, আফরোজা, সাইফুর রুদ্র, আরমান শাহরিয়ার সৌরভসহ আরও কয়েকজন সংগঠক বক্তব্য দেন।

সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের মূর্তপ্রতীক, যার ইতিহাস ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ পর্যন্ত আমরা জানি না, সেই শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন অফিস-আদালতে রাখা হয়েছিল। যারা বলছে, কেন শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি সরানো হলো- তাদের হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আপনারা কোনোভাবে মুজিববাদকে সাপোর্ট করতে পারেন না। এ মুজিববাদের যারা মুরিদ এবং আওয়ামী লীগকে যারা ধর্ম ও শেখ মুজিবকে যারা দেবতা মনে করে তাদের বলতে চাই, এ ফ্যাসিবাদের মূর্তপ্রতীক শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে নির্যাতন ও নিষ্পেষণ চালিয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি কেউ তাকে আর বাংলাদেশে ধর্ম কিংবা দেবতা বলে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করেন তাদের আমরা দমন করব। আমরা কোনোভাবে মুজিববাদকে এ বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠা হতে দেব না। এ মুজিববাদ কেউ যদি বাংলাদেশে কোনোভাবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে আপনারা ঐক্যবদ্ধ থাকুন। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সেটা রুখে দেব। আমরা অতিদ্রুত স্বৈরাচারের দোসরদের উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে অপসারণ চাই। গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ফ্যাসিস্ট পতিত শক্তি বিভিন্নভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। আওয়ামী লীগের দোসররা তাদের ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। এ সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে পতিত শক্তির দালালেরা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ এখনো রাজপথে আছে। আপনারা কোনোভাবে পতিত স্বৈরাচারী শক্তির দালালদের আমাদের অন্তর্বর্তী সরকারে কোনোভাবে স্থান দিতে পারেন না।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা শাপলা চত্বরে হেফাজতের ওপর বর্বোরোচিত হত্যাকাণ্ডের কথা জানেন। সেই হেফাজতের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম থেকে যখন শাহবাগী ফারুকীকে উপদেষ্টামণ্ডলী থেকে বরখাস্তের আওয়াজ তোলে তখন তাদের আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অথচ জুলাই আন্দোলনে শহিদ দুই হাজার মানুষের হত্যাকারীদের এখনও পুলিশ প্রশাসন আটক করতে পারেনি। পতিত শক্তির বিরুদ্ধে যারা আওয়াজ তুলেছে তাদের পাঁচজনকে তারা আটক করেছে। এ গ্রেফতারের সংখ্যা কখন ৫০০ বা ১ হাজার হয় আমরা জানি না। আপনারা স্বৈরাচারের দোসর হয়ে কখনো কাজ করবেন না। যদি করেন তাহলে আপনাদের দায়িত্ব থেকে নামাতে আমরা কালক্ষেপণ করব না। যে বৈষম্যের জন্য আমাদের ভাইয়েরা রাজপথে রক্ত দিয়েছে, সে বৈষম্য এখনো হচ্ছে। উত্তরবঙ্গ থেকে একজনকেও উপদেষ্টামণ্ডলীতে নেওয়া হয়নি। এ কেমন বৈষম্য?’

উত্তরবঙ্গ এখনও অবহেলিত উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘উত্তরবঙ্গ কেন সবসময় অবহেলিত থাকবে। আমরা এ ক্ষমতার সুষম বণ্টন চাই। আপনাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন। আপনারা কোনোভাবে স্বৈরাচারের দালালদের উপদেষ্ঠামণ্ডলীতে জায়গা দিতে পারেন না। শহিদের রক্তের সঙ্গে তারা বেঈমানি করছে বলে আমরা মনে করছি। আমরা কোনোভাবে এ ফ্যাসিস্টদের দালালদের উপদেষ্টামণ্ডলীতে চাই না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে বিপ্লবী প্রশাসন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রাম সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের সমন্বয়ক এজিএম বাপ্পী বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র-জনতার সরকার। জুলাই বিপ্লবের মতাদর্শের বাইরে কাউকেই এ সরকারে আনা যাবে না। এ ফারুকী শাহবাগী। সে আওয়ামী লীগের দোসর। সেখ বশির ছাত্র হত্যার আসামি। আমরা জানতে চাই, কীভাবে এ সরকারের প্যানেল ঠিক হয়। কোথা থেকে আসে অন্তর্বর্তী সরকারের প্যানেল। আমরা এনজিও মার্কা সরকার চাই না। আমরা বিপ্লবী সরকার চাই।’

তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। হুকুমদাতা হিসেবে আওয়ামী লীগকেও নিষিদ্ধ করতে হবে। বর্তমান প্রশাসন নিয়ে আমরা হতাশ। নিতান্তই হতাশ। ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগ গোপনে মিছিল-মিটিং করছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কী করছে। তাদের কাজ কী? আমরা প্রধান উপদেষ্টার প্রতি আহ্বান জানাই, প্রশাসনকে বিপ্লবী প্রশাসন হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম জেলার সমন্বয়ক জুবায়ের আহমেদ মানিক বলেন, ‘স্বাধীনতা মানে এ নয় যে, আপনারা যেরকম ইচ্ছা সেরকম করবেন। আমরা দল কিংবা কোনো ব্যক্তির পরিবর্তন চাইনি। আমরা সিস্টেমের পরিবর্তন চেয়েছি। প্রশাসনকে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা দিতে হবে। সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে ধরে তুলে নেওয়া যাবে না।’

আরও খবর