ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ নিয়েছে ইরান, সৌদি আরব, তুরস্ক, চীন, কাতার, লেবাননসহ বেশ কয়েকটি দেশ। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধ ঘোষণার পরপরই ইরানের পক্ষ থেকে কঠোর বার্তা দেওয়া হয়। এক দিন পর পশ্চিমাদের প্রতি কঠোর বার্তা ছুঁড়ে সৌদি আরব।

এদিকে সংঘাতের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার (৭ অক্টোবর) এক বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করা হয়। এদিকে গত কয়েক মাস ধরেই সীমান্তে লেবানন ও ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলার সময় লেবানন থেকে রকেট ছোড়া হলে এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়।

এদিকে বেইজিংয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের কথা উঠে এসেছে। এ সময় চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অবিলম্বে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় এও বলেছেন, দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাই এ চলমান সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার উপায়।

চীনের এই বক্তব্যে হতবাক ইসরায়েল। তারা ভেবেছিল হামাসের হামলার কঠোর নিন্দা জানাবে চীনারা। বেইজিংয়ে ইসরায়েলি দূতাবাসের সিনিয়র কর্মকর্তা ইউভাল ওয়াকস বলেছেন, রাস্তায় মানুষকে জবাই করা হচ্ছে, এখন দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের ডাক দেওয়া সময় নয়।

ইসরায়েলে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় হামলার ঘটনায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের অভিবাদন জানিয়েছে ইরান। ইরানের গণমাধ্যম আইএসএনএ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলি খামেনির এক উপদেষ্টা শনিবার ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের বিগত বছরগুলোতে সবচেয়ে বড় হামলা করায় অভিবাদন জানান। রাহিম সাফাভি নামের ওই উপদেষ্টা বলেন, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের স্বাগত জানাই। যতক্ষণ পর্যন্ত ফিলিস্তিন ও জেরুজালেমের স্বাধীনতা অর্জন হচ্ছে না, আমরা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের পাশে থাকতে চাই।

সংবাদমাধ্যম ইরনার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধ ও অর্জনকে স্বাগত জানিয়ে শনিবার ইরানের রাজধানী তেহরানের পাশাপাশি মাশহাদ, তাব্রিজ ও জাঞ্জান শহরের সড়কে নেমে হাজার হাজার মানুষ সমাবেশ করেছেন।

ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ‍ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ করেছেন সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। এ সময় ফিলিস্তিনের বেসামরিক নিরস্ত্র মানুষের ওপর ইসরায়েল যেন কোনো হামলা না চালায় তার ওপর জোর দেন তিনি। গতকাল শনিবার সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এসব তথ্য জানিয়েছে। খবর আরব নিউজ।

শনিবার ইসরায়েলে হামাসের হামলার পরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এবং ইইউ পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেলের সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনালাপ করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য এবং সহিংতা এড়ানোর জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা চালাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ছাড়াও কাতার, মিসর ও জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলাপ করেছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সংঘাতের জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করেছে কাতার। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শনিবার (৭ অক্টোবর) এক বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের কড়া সমালোচনা করা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ফিলিস্তিনের জনগণের সঙ্গে চলমান উত্তেজনা ও সহিংসতার জন্য একমাত্র ইসরায়েল দায়ী।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েল গাজার বেসামরিক বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অসামঞ্জস্যপূর্ণ যুদ্ধ শুরু করার অজুহাত হিসেবে এ রকেট হামলাকে ব্যবহার করছে। এ থেকে ইসরায়েলকে থামাতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে কাতার।

এদিকে ইসরায়েলকে দোষারোপের পাশাপাশি উভয় পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় এর বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করা হয়।

আজ ইসরায়েলে যা হয়েছে তারপর আমি বলতে চাই, আপনারা এমন কিছু করবেন না যাতে সংঘাত বাড়ে, এই দুই পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানাই।

গত কয়েক মাস ধরেই সীমান্তে লেবানন ও ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের হামলার সময় লেবানন থেকে রকেট ছোড়া হলে এই উত্তেজনা চরমে পৌঁছায়। এ সময় শিয়া সশস্ত্র গোষ্ঠীর সদস্য ও সমর্থকরা ইসরায়েলি সেনাদের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

স্থানীয় সময় শনিবার এক বিবৃতিতে লেবাননের সেনাবাহিনী জানায়, ইসরায়েলি সেনাদের বহর নির্ধারিত সীমানা অতিক্রম করে এবং লেবানিজ সেনাদের ওপর স্মোক বোমা ছুড়ে মারে। এর আগে নির্ধারিত সীমানা বরাবর ইসরায়েলি সেনাদের তৈরি এক মাটির দেয়াল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় লেবাননের সেনারা।

তুরস্ক

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি দ্বন্দ্বে সরাসরি ফিলিস্তিনিদের পক্ষ না নিলেও এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনি দুই পক্ষকেই সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। শনিবার আঙ্কারায় ক্ষমতাসীন একে পার্টির কংগ্রেসে এরদোয়ান বলেন, আমরা সব পক্ষকে সংযমের আহ্বান জানাই। তাদের অবশ্যই আক্রমণাত্মক কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে।

এরদোয়ানের এমন আহ্বানের পরপর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের এই উত্তেজনা নিয়ে গভীর উদ্বেগ করেছে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে সহায়তা করার কথা জানিয়েছে আঙ্কারা।

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি চলমান দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পাকিস্তানে চলমান দ্বন্দ্বময় পরিস্থিতির সমাধান চায়। পাকিস্তান সবসময় দুই রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে ছিল। ১৯৬৭ সালের আগেকার সীমান্ত অনুযায়ী আল কুদস আল-শরীফকে রাজধানী করে সার্বভৌম স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গড়ার পক্ষে দেশটি।

এদিকে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়েছে। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দেশটির সরকার জানিয়েছে, সম্প্রতি গাজা উপত্যকায় চলমান ঘটনার প্রতি কড়া নজর রেখেছে ইসলামিক ইমিরট অব আফগানিস্তান। তারা মুসলমানদের ধর্মীয় বিভিন্ন স্থাপনাকে অমর্যাদা করেছে, ফিলিস্তিনি মানুষের প্রতি নিপীড়ন চালিয়েছে।

আরও খবর