ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে চবি আবারও রণক্ষেত্র
নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে সামান্য কথা কাটাকাটি থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসকে আবারও রণক্ষেত্রে পরিণত করলো ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হেলমেট পরে এবার বিবাদে জড়ানো দুই উপগ্রুপ হলো সোহরাওয়ার্দী হলে অবস্থানরত বিজয় ও শাহজালাল হলে অবস্থানরত সিক্সটি নাইন।
শুক্রবার (৬ অক্টোবর) জুমার নামাজের পর মায়ের দোয়া ভাতঘর এন্ড বিরিয়ানি হাউস নামক খাবারের দোকানে কথা-কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, জুমার নামাজের পর খাবারের দোকানে বিজয় গ্রুপের অনুসারী মাহির চৌধুরীর সাথে কথা-কাটাকাটি হয় সিক্সটি নাইন গ্রুপের অনুসারী আজমিরের। এক পর্যায়ে তা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এ ঘটনার পর পরেই দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এবং বিকেল ৩ টার দিকে তা সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ চলতে থাকে। উভয় পক্ষের নেতাকর্মীদেরকেই সংঘর্ষ চলাকালে দেশীয় অস্ত্রের মহড়া দিতে দেখা যায়। এসময় বিজয় গ্রুপের আলাওল হল ও এএফ রহমান হল অংশের বেশকিছু নেতাকর্মীকেও সোহরাওয়ার্দী হল অংশের নেতাকর্মীদের সাথে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।
পরবর্তীতে বিকেল চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি ও পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করে নিজ নিজ হলে পাঠিয়ে দেন। প্রায় ঘন্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে সিক্সটি নাইন গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সাইদুল হক সাইদ বলেন, খাবারের দোকানে ওরা (বিজয়ের নেতাকর্মীরা) আমাদের এক ছেলের উপর পূর্বঘটনার জের ধরে ইচ্ছেকৃতভাবে ঝামেলায় জড়িয়েছে। এর পর তাদের ছেলেরা সোহরাওয়ার্দী হল থেকে বের হয়ে শাহজালাল হলে হামলা চালাতে আসে। যার ফলে আমাদের ছেলেরাও হল থেকে বের হলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
অপরদিকে বিজয় গ্রুপের নেতা শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, খাবারের দোকানে ঝামেলা হওয়ার পর আমি আমার কর্মীদের হলে ঢুকিয়ে দিয়ে সিনিয়রদের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করতেছিলাম। এমন সময় তারা (সিক্সটি নাইনের অনুসারীরা) শাহজালাল হল থেকে বের হয়ে আমাদের হলে অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের ছেলেরা তাদেরকে প্রতিহত করে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নূরুল আজিম শিকদার বলেন, হোটেলে খাবার খেতে গিয়ে সোহরাওয়ার্দী হল ও শাহজালাল হলের ছেলেদের মধ্যে ঝামেলা হয়েছিল। খবর পেয়েই আমরা পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে ইউস্থিত হয়ে ছেলেদের শান্ত করতে সক্ষম হই। ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে।
চবি ছাত্রলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে ফাও খাওয়া, ক্যাম্পাসকে মাদকের আখড়ায় পরিণত করার অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। ছাত্রলীগ নেতারা মেয়ে নিয়ে হোটেলে ফুর্তি করতে গিয়ে ধরা খাওয়া, দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ায় ক্যাম্পাসের আতঙ্ক এই সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত করা হয় গত ২১ সেপ্টেম্বর। কমিটি ঘোষণার পর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা চারদিন শাখা ছাত্রলীগের ৩ গ্রুপের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে।