এখন ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম, পানি নামলে পুনর্বাসন
অন্তর্বর্তী সরকারের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বলেছেন, চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন ত্রাণ ও বন্যার্তদের উদ্ধার কার্যক্রম চলছে। বন্যার পানি নেমে গেলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেবো।
উপদেষ্টা সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউস মিলনায়তনে আয়োজিত মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
ফেনী, নোয়াখালীসহ বন্যা-কবলিত এলাকার পরিস্থিতি বর্ণনা করতে গিয়ে ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘আমি এখনো বিভিন্ন এলাকায় মানুষ পানিবন্দী থাকতে দেখেছি। সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে শুকনো এবং রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। দুর্গম ও পানিবন্দী হওয়ায় ফেনী, নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া এবং উদ্ধার তৎপরতা চালাতে কিছুটা সময় লেগেছে। এসব এলাকায় নৌকায় চলাচলের সংস্কৃতি না থাকায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা এনে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বানভাসীদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছেন। সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থা আধুনিক বোটের সাহায্যে বন্যা-দুর্গতদের কাছে গিয়েছে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত এ উদ্যোগে আমরা অভিভূত। এটা আমাদের শক্তি জুগিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষের মাঝে অদ্ভূত এক পরিবর্তন এসেছে। বন্যার্তদের জীবন বাঁচাতে ও ত্রাণ কার্যক্রমে মানুষ যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। মানুষের এ উচ্ছ্বাস সরকারের জন্য মস্তবড় শক্তি। জনসাধারণের ব্যাপক কার্যক্রমের কারণে বন্যা-কবলিতদের কাছে যাওয়া ও সেবা দেয়া সরকারের পক্ষে সহজ হয়েছে। পানি পুরোপুরি না নামায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আরো কিছু সময় প্রয়োজন।’
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি বন্যা এবং বন্যা-পরবর্তী পরিস্থিতি জানার জন্য মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের কাছে তাদের মতামত জানতে চেয়েছিলাম। তাদের কাছ থেকে মাঠপর্যায়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা বাস্তব চিত্র পেলাম। এর ভিত্তিতে আগামী দিনের পুনর্বাসন কর্মসূচি নির্ধারণ করতে পারবে সরকার।’
তিনি বলেন, পুনর্বাসন প্রক্রিয়া হবে অত্যন্ত স্বচ্ছ। আমরা অগ্রাধিকার ঠিক করবো। প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কমিটি হবে। আর এতে দেশে সর্বস্তরের জনগণকে সম্পৃক্ত করা হবে। সরকারের পুনর্বাসনের উদ্যোগ ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে সব মানুষ যেন অবগত হতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে। বন্যা-দুর্গত এলাকার জনস্বাস্থ্যের দিকেও সরকারের বিশেষ নজর রয়েছে। এসব এলাকায় পানিবাহিত নানা রকম রোগ হচ্ছে। সেগুলো আমরা চিহ্নিত করে মানুষের রোগমুক্তিতে কাজ করছি। প্রতিটি করণীয় ধাপে ধাপে সম্পন্ন করা হবে।’
ব্রিফিংকালে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রাকিব হাসান ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধ, দুর্যোগ ও ত্রাণ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীর প্রতীক বন্যা-কবলিত চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন।
হাটহাজারীর হালদা পাড় এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের বসতঘর নির্মাণ করে দেয়ার আশ্বাস দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা বন্যায় বসতঘর হারিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন আপনারা চিন্তা করবেন না, সরকার আপনাদের পাশে আছে।’ তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলেন। বন্যায় মানুষের দুর্ভোগের কথা শোনেন এবং সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে বলে উল্লেখ করেন।
পরিদর্শনকালে বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল আহমেদ, হাটহাজারী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোয়েব আহমদ, চট্টগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ, রাঙামাটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তয়ন কুমার ত্রিপুরা, হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম মশিউজ্জামান, সহকারী কমিশনার ভূমি মেহনাজ শারবীন প্রমুখ উপদেষ্টার সঙ্গে ছিলেন।