বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৩য় ইউনিটে উৎপাদন শুরু, যুক্ত হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে
দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়েছে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। খবর বাসসের।
রোববার (১৫ সেপ্টেমার) রাত ১২টায় এতথ্য নিশ্চিত করেন, দিনাজপুর বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি জানান, গতকাল রোববার দুপুর দেড়টা থেকে এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটটি মেরামত শেষে উৎপাদনের জন্য ট্রায়েল কার্যক্রম শুরু করা হয়। গতকাল রোববার রাত ১১টায় সফলভাবে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন এ ইউনিট থেকে রোববার রাত ১১টায় ২১০ থেকে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সফলভাবে উৎপাদিত হতে শুরু করেছে। উৎপাদিত বিদ্যুৎ গতকাল রাত ১২টার পর থেকেই জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটের উৎপাদন শুরু হয়। ওই ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও সেটি থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
বর্তমানে গড়ে দুটি ইউনিট থেকে ২৮৫ থেকে ৩’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। এতে দেশের উত্তরাঞ্চলের লোডশেডিং অনেকাংশে কমে আসবে বলে কর্তৃপক্ষ আশা করছেন ।
বড়পুকুরিয়ার তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষের দেয়া তথ্যমতে, এ কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর ৩টি ইউনিটি ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করেন চায়না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল। গত ২০২০ সাল থেকে ২৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছরের চুক্তি আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।
তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রর ৩টি ইউনিটের ৫২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিটের হলেও দুটি ইউনিট থেকেই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। বাকি একটি ইউনিট ওভার ওয়েলের জন্য বন্ধ থাকে। এর মধ্যে চলতি বছরের জুলাই মাসের শেষ দিকে বন্ধ হয়ে যায় ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ৩ নম্বর ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন।
টানা ৩৬ দিন বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ থাকার পর, গত ৬ সেপ্টেম্বর থেকে তৃতীয় ইউনিটটি চালু হলেও দু’দিন পর ৯ সেপ্টেম্বর ওয়েল পাম্প নষ্ট হওয়ার কারণে আবারও উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়।
৬ দিন পর গতকাল ১৫ সেপ্টেম্বর দুপুর দেড়টা থেকে ট্রায়েল দিয়ে রাত ১১ টায় পুরোদমে উৎপাদন শুরু হয়েছে। এ ইউনিটটি ২৭৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও দৈনিক ২১০ থেকে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে। যা জাতীয় গ্রিডে যোগ দেয়া হচ্ছে। এ জন্য প্রতিদিন ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়।
একই দিন গত ৬ সেপ্টেম্বর ১ নম্বর ইউনিটটি সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ করা হয়। পরে ১২ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ১ নম্বর ইউনিটের বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হয়। এ ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও সেটি থেকে প্রতিদিন ৭০-৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। এ ইউনিটটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হচ্ছে। এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১ নম্বর ইউনিটি চালু রাখতে ৮০০ থেকে ৯০০ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন হয়।
সূত্রটি জানায়, এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি চালু থাকলে উত্তর অঞ্চলের ৮ জেলা লোডশেডিং অনেকাংশে কমে আসবে। অপর দিকে গত ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ২ নম্বর ইউনিট বন্ধ রয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হতো ৬৫-৭০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
দিনাজপুর বড় প্রক্রিয়া কয়লা খনি সহকারী ব্যবস্থাপক নুরুজ্জামান মিয়া জানান, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুদ রয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে দৈনিক কয়লা সরবরাহ করা হয় ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। তবে, ৩ টি ইউনিট একই সঙ্গে কখনো চালানো সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গত ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২ নম্বর ইউনিটটি বন্ধ রয়েছে। চায়না থেকে নতুন ওয়েল পাম্প এনে স্থাপনের পর তৃতীয় ইউনিট থেকে উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। যা থেকে ২১০ থেকে ২২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে যোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘সংস্কার কাজ শেষে গত ১২ সেপ্টেম্বর মধ্যে রাত থেকে ১ নম্বর ইউনিটটি উৎপাদন শুরু করা হয়েছে। এ ইউনিটটি ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও সেটি থেকে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ করা হচ্ছে। বর্তমানে গড়ে দুটি ইউনিট থেকে ২৮৫ থেকে ৩’শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ এ কেন্দ্রটি থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে।’ এর ফলে উত্তরাঞ্চলের লোডশেডিং কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন।